দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে নিম্ন প্রযুক্তির ফাঁদ ও স্বল্প মজুরীর চক্র হতে বের করে নিয়ে এসে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ফরিদপুর জেলাস্থ সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) রিকভারি এন্ড এডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (আরএআইএসই-রেইজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এসডিসি নামক সংস্থাটি প্রকল্ল্পটির আওতায় কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার তিনশত জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করেছে এবং প্রত্যেকেই ‘ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় সম্প্রসারণ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। এছাড়া, ৭০ জন তরুণ বেকারকে ৩৫ জন মাস্টার ক্র্যাফটসপার্সন বা ওস্তাদের মাধ্যমে কারিগরি ও ব্যবসায় দক্ষতা বিষয়ক ৬ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। আগামী অর্থ বছরে আরো ১ হাজার জন তরুণ উদ্যোক্তাকে (বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে) অর্থায়ন ও তিন মাসব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় ধারাবাহিকতা, জীবন দক্ষতা ও সফট স্কিলস উন্নয়ন এবং এডভান্স কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আরও দুই শতাধিক বেকার তরুণকে গুরু-শিষ্য মডেলে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
রেইজ প্রকল্পের আওতায় তিন মাসব্যাপী ‘ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রবিবার( ১১ জুন ) সকাল ১০:০০ টায় এসডিসি’র আলিপুরস্থ প্রধান কার্যালয়ে শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফুল হাসান। প্রকল্পের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ হতে উপস্থিত ছিলেন গোলাম জিলানী, ব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ও উপ-প্রকল্প সমন্বয়কারী, রেইজ প্রকল্প এবং মোঃ ফারুক হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, রেইজ প্রকল্প। এছাড়া, ‘এসডিসি’ ও ‘আমরা কাজ করি’ সংস্থার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের প্রথম ব্যাচে বিভিন্ন বিভিন্ন ট্রেডের ২০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করে।
গোলাম জিলানী, ব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ও উপ-প্রকল্প সমন্বয়কারী রেইজ প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, প্রকল্পটি সারা দেশের আরবান ও পেরি-আরবান এলাকায় পিকেএসএফ-এর ৭০টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ছোট উদ্যোক্তার ব্যবসা সম্প্রসারণে উপযুক্ত ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া, ৭ হাজার দক্ষ ওস্তাদের মাধ্যমে ৩৫ হাজার বেকার তরুণকে শিক্ষানবিসি পদ্ধতিতে (গুরু-শিষ্য মডেল) কারিগরি ও ব্যবসায় দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ছোটো উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্প।
সভাপতির বক্তব্যে কাজী আশরাফুল হাসান পিকেএসএফ ও সরকারকে সময়োপযোগী একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্যে ধন্যবাদ প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে ছোটো ছোটো উদ্যোক্তাগণ সহজ শর্তে ঋণ পাবে যা তার ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
প্রকল্পের আওতায় উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৭ হাজার মাস্টারক্রাফটস পার্সন তৈরি, ৮০০ জন প্রশিক্ষককে লাইফ স্কিলস/সফট স্কিলস বিষয়ে মাস্টার ট্রেনার এর এডভান্স প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের মধ্য হতে ৩ হাজার পাঁচশত জনকে ‘রিকগনিশন অব প্রাইওর লার্নিং (আরপিএল)’ এর সুযোগ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের মোট অংশগ্রহণকারীর ৩০ শতাংশই হবে নারী। ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক হতে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে এবং অবশিষ্ট ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পিকেএসএফ-এর নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে মর্মে পিকেএসএফ প্রতিনিধি সভায় জানান।