মাহবুব পিয়াল : বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ ও রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের এক সাংস্কৃতিক মেল বন্ধন সাহিত্য বৈঠক শনিবার (০৭ জানুয়ারি) বিকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে অনুষ্টিত হয়েছে।এতে ফরিদপুর-রাজবাড়ী জেলার কবি ও সাহিত্যিকরা অংশগ্রহণ করেন।
আনন্দঘন বর্ণিল সাহিত্যপ্রেমিদের এই মিলনমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্টাতা সভাপতি প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম এ সামাদ, রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট. ইমদাদুল হক বিশ্বাস,রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের আহ্বায়ক খোকন মাহমুদ, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, রাজবাড়ীর মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি কবি সালাম তাছির, কবি শান্তি ভূষণ দাস প্রমূখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কবিতা পাঠ করেন ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার কবিরা। এসময় প্রেসক্লাব মিলনায়তন দুই জেলার কবি-সাহিত্যিকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করেও এসময় অন্যরকম পরিবেশে কবি-সাহিত্যিকরা তাদের নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করেন; আড্ডায় মেতে ওঠেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কবিতা পাঠ পর্বে গোটা মিলনায়তন কবিতায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন কবি আব্দুস সামাদ, ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক নুরু উদ্দিন, কবি ও লেখক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, কবি আলীম আল রাজী, কবি শাহ মো. রশিদ আল কামাল, কবি শাহনাজ বেগম, কবি পারভীন হক, কবি খোকন মাহমুদ, কবি কাবেরী আক্তার,কবি নিলুফার ইয়াসমিন রুবী সহ দুই জেলার কবিরা।
শীতের বিকালের ঝিরঝির হিম বাতাস আর সন্ধ্যার মৃদু কুয়াশায় বিমূর্ত কবিতাগুলো কবিদের কণ্ঠে যেন মূর্ত হয়ে ওঠে। কবিতার সিগ্ধ কাঠির ছোঁয়ায় অন্যরকম আবেশে অভিভূত হন কবি, শ্রোতা ও সুধীবৃন্দ।
এর আগে একইদিন সকালে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে “আমার সোনার বাংলা” শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে আবহমান বাংলার বিভিন্ন ছবি শোভা পায়।
আমার সোনার বাংলা, আহ! কত রকমের ধান। চমৎকার শিরোনামে যেন ডেকেছিলো সকলকে। কারন, এসব ধানের নাম যেন বর্তমান হারিয়ে ফেলা ধন। সত্যিই হারিয়ে গেছে বেশিরভাগ ধান। আধুনিকতার ছোয়ায় বর্তমান হাতেগুনা কয়েকটি ধান বিদ্যমান ও নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত। তবে, হারিয়ে যাওয়া এসব ধানের নাম রঙিনরুপে ফিরে এসেছিলো ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্ত্বরে।
রঙিন কাগজে শতাধিক ধানের নাম লিখে টাঙিয়ে রাখা হয়। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানে আগত সকলেরই চোখ চলে যায় ধানের নামের দিকেই। কেউ কেউ আবার ধানের নামগুলো গুনে গুনে ব্যস্ত সময় কাটায়।
বিকালে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে ঢুকতেই চোখে পড়ে “আমার সোনার বাংলা, আহ! কত রকমের ধান” শিরোনামের দিকে। যার কারন, সেখানে উল্লেখ ছিলো শতাধিক ধানের নাম। তারমধ্যে- বাইশ বিশ, দুধ লাকি, পাষপাই, সরিষাজুরি, মালিয়া ডাক্রো, খাড়া জামড়ি, চিনি সাগর, কালোমেঘী, পাঁকড়ী, যাত্রা মুকুট, শিলগুড়ি, পশুর, মাটিচাক, রাঁধুণীপাগল, কাতি বাগদার, হিজল দিঘী, কালামানিক, পোড়াবিন্নি, মধুমালতী, হণুমান জটা, লালটেপা, চিংড়ি খুশি, কটকতারা, রায়েদা, মহিষদল, তিলকাবুর, ষাইটা, লহ্মীজটা, বাবই ঝাঁক, পাকড়ি, বোরো, ক্ষিরাই জালি, রাণী সেলুট, তিলকাবুর, যশোয়া, বাইলাম, পাট নাই, ভাষা মানিক, ধলা আমন, সূর্যমূখী, রাজা-মোড়ল, কাচারী, খেজুর রুপী, কালাব করি, ধারাইল, পটুয়াখালী, জল কুমারী, বাঁশফুল, পাইজম, নুনা কুর্চি, ফুলমালা, বটেশ্বর, বেনামুড়ি, দাউদিন, রুপকথা, কলস কাঠি, লহ্মীরিলাশ, সোনামুখী, চিটবাজ, রুপকথা, নাগরা, হরিঙ্গাদিঘী, আটলাই, ফুলবাদাল, পঙ্খীরাজ, বালাম, জেশো বালাম, হরিণ মুদ্রা, মুড়কে আউশ, পান বিড়া, কালোমেখী, ঘিগজ, পাট জাগ, ঝুমুর বালাম, ভাতুড়ী, হরিধান, তিলক, দুধ সর, ইন্দ্র শাইল, লেবু শাইল, লাট শাইল, রুপ শাইল, নাজির শাইল, মধু শাইল, ঝিংগা শাইল, হাতি শাইল, গোবিন্দ ভোগ, কাটারীভোগ, গান্ধী ভোগ, বাদশা ভোগ, দুলাভোগ, জামাই ভোগ আরো অনেক নাম।
শুধু ধানের নাম নয়। সাংস্কৃতিক এ মেলাবন্ধনে তুলে ধরা হয়েছে অনেক কিছু। সেগুলোও আগত দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তারমধ্যে, নাসির আলী মামুন-এর ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র, শিশুর তুলিতে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশি মুদ্রার ছবি, সুন্দরবনের চিত্রাবলী, পাখি আর প্রজাপতির ফটোগ্রাফ, বাংলাদেশের নদীর নাম, মন্টু সরকারের তোলা ফরিদপুরের প্রাচীন স্থাপনার ছবি, রমনা পার্ক বিচিত্রা, ফরিদপুরের খ্যাতিমানদের ছবি, প্রচলিত ছড়া, খনার বচন, জেলা পরিচিতমূলক গ্রন্থ এবং হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধান।
এছাড়া সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এ অনুষ্টানে গুনিজন সংবর্ধণা দেয়া হয়।